Facebook
Twitter
LinkedIn
Instagram
Tumblr

ওভারিয়ান টিউমার: নারীর গুপ্তঘাতক

ওভারিয়ান টিউমার: নারীর গুপ্তঘাতক


আয়েশা, বছর তেরোর কিশোরী। বাবা দরিদ্র দিনমজুর। দেশসেরা এক মেডিকেল কলেজে ভর্তি। হাড্ডিসার দেহ, পেট ফোলা আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে। প্রতিদিনই দুই তিন লিটার পানি পেট থেকে বের করেও শ্বাস কষ্ট কমানো যায় না। মেয়েটার নাকি অনেকদিন থেকেই খাওয়া দাওয়ায় অরুচি ছিলো, ওজন কমে যাচ্ছিল ধাই ধাই করে। বাবা মা মনে করেছে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, গুরুত্ব দেয়নি। তারপর পেটে চাকা অনুভব করে, যা দ্রুত বাড়ছিল। শারীরিক কন্ডিশন এতই খারাপ ছিলো যে, অপারেশন করার মতো ফিটনেস ছিলো না। ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মাত্র পনেরো দিনের মধ্যেই পরপারে পাড়ি জমায়। আহা, মেয়ে!

দুই.

মায়া রানী, বয়স ষাটের ঘরে। দরিদ্র কৃষানী। আমার কাছে এসেছে পেটে ইয়াব্বড় চাকা আর হাড্ডিসার দেহ নিয়ে। খালা তোমার কন্ডিশন এত্ত খারাপ হলো কি করে? আফা অনেকদিন থেকেই খাইতে লইতে পারিনা, বমি বমি লাগে, পেট গুড়গুড় করে। ভাবছিলাম খাইতে পারিনা তাই ওজন কমছে, ফার্মেসিত্তে গ্যাস্টিক ওষুধ নিয়ে খাইসি, কোন কাম অয় নাই। এহন তো পেটে ব্যাথা থাহে সবসময়, পায়খানা পেসাবেও সমিস্যা। পেটে দেহেন কেমুন শক্ত চাকা। ভারী ভারী লাগে। খাইয়া বইয়া শান্তি নাই। ভালো করে কাউন্সিলিং করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হলো। দুইদিন আগে রোগীর ছেলে এসে জানালেন, তার মায়ের অপারেশন হয়েছে, এখন কেমো দিতে হবে।

তিন.

রোকাইয়া, চল্লিশ বেয়াল্লিশ বয়স, তিন সন্তানের মা। সম্ভ্রান্ত পরিবারের হাউজ ওয়াইফ। দেখতে বেশ সুন্দর। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি পেটে চাকা, পানি নিয়ে। প্রতিদিনই একটু একটু করে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। একদিন দেখলাম শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, পরের দিন যেয়ে দেখি বসে থাকলেও শ্বাসকষ্ট। পেটে পানি চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়ছে, লাংসেও পানি জমা হচ্ছে। দুই তিন দিনের মধ্যেই যায়যায় অবস্থা।

অনলাইনে মেডিসিন অর্ডার করতে ভিজিট করুন দেশের সর্ব বৃহৎ অনলাইন মেডিসিন মার্কেট---

https://medilink.com.bd/


 উপরের তিনটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সবার প্রায় একই কারণ- ওভারিয়ান টিউমার। জরায়ুর দুইপাশে দুটি ওভারি বা ডিম্বাশয় থাকে। এই ডিম্বাশয়ের টিউমারকে ওভারিয়ান টিউমার বলে। ওভারিয়ান টিউমার আমাদের দেশে মহিলাদের টিউমারের মধ্য পঞ্চম ক্যান্সার ডেথের কারণ। উন্নত বিশ্বে দ্বিতীয়। আমাদের দেশে যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তার এক থেকে তিন ভাগ এই রোগী। শতকরা আশি ভাগই বিনাইন বা নিরিহ আর পনেরো বিশভাগ ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার। 

সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে এই টিউমার বুড়া থেকে ছোড়া সব বয়সী নারীদের হয় এবং তেমন কোনো সিম্পটম থাকে না। যাদের ফ্যামিলি হিস্ট্রি আছে, মা কিংবা বোনের আছে, নিজের শরীরটা অন্য ক্যান্সার যেমন ব্রেষ্ট, জরায়ু, এবং কোলন ক্যান্সার আছে তাদের বেশি হয়। আগে থেকে স্ক্রীনিং-এর তেমন কোনো ব্যাবস্থা নাই। তবে পেরিওডিক্যাল পেলভিক এক্সামিনেশন, আল্ট্রাসাউন্ড রক্তের কিছু মার্কার করলে কিছুটা আঁচ করা যায়।

রোগী বলে খেতে পারি না, বমি বমি লাগে, ওজন কমে যায় আর গ্যাস্টিকের মতো সমস্যা। গ্যাস্টিকের ওষুধ খায়, কিন্তু রোগ তো ছাড়ে না, একসময় পেটে চাকা হাতে লাগে। পেট ফুলে ঢোল, শ্বাসকষ্ট আর... না দেখলে আসলে বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব নয় এসব রোগীদের যন্ত্রণা। মাত্র দশ বারো দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই যখনি ধরা পড়বে কালক্ষেপণ না করে, পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে, টিউমার বোর্ডের ওপেনিয়ন নিয়ে অপারেশন করে রিমুভ করে ফেলাই নিয়ম। অনেক সময় ক্লিনিক্যালি মনেহয় ভালো টিউমার অথচ হিস্টোপ্যাথোলজিতে পাওয়া যায় ক্যান্সার, আবার উল্টোটাও হয়। কাজেই অপারেশন হচ্ছে মেইন চিকিৎসা, কারো কারো কেমোথেরাপি লাগে। কোনো গড়িমসি করার উপায় নেই।

আর এই টিউমার এতই আনপ্রেডিক্টেবল যে কোনো বয়সে যে কারো হতে পারে। আবার এটা এমনই গুপ্তঘাতক যে খুব বেশি না ছড়ালে বোঝা যায়না। রোগী মনে করে তার গ্যাস্টিক। এই গ্যাস্ট্রিক থেকে কবে যে আমরা মুক্ত হবো? কাশি? গ্যাস্টিক। হাসি? গ্যাস্টিক। অথচ এই গ্যাস্টিক যে ওভারিয়ান টিউমারের লক্ষ্মণ এটা আমরা অনেকেই জানিনা। প্রিয় সুহৃদ কারো যদি খাবারের অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, পেটে ভারী ভারী লাগা এবং সবশেষে চাকা লাগলে শুধুই গ্যাস্ট্রিকের দোষ না দিয়ে একটু ডাক্তার দেখান। পরীক্ষা নীরিক্ষা লাগলে করান। মনে রাখবেন জীবন কিন্তু একটাই। কে বলতে পারে কোন গুপ্ত ঘাতক কোন জায়গায় ওঁৎ পেতে আছে সুযোগের অপেক্ষায়?