Facebook
Twitter
LinkedIn
Instagram
Tumblr

সিজারিয়ান অপারেশন আসলে কতটা জরুরি?

সিজারিয়ান অপারেশন আসলে কতটা জরুরি?


মা' ডাকটির জন্য একজন নারীকে অসহ্য প্রসবকালীন যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। আগে ডেলিভারি বলতে নর্মাল ডেলিভারি বোঝানো হলেও এখন তার অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে সিজারিয়ান সেকশন। প্রশ্ন হলোসিজারিয়ান আসলে কতটা জরুরি?

ইতিহাস বলে সিজারিয়ান অপারেশন প্রসূতি বিদ্যার এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ল্যাটিন শব্দ থেকে এর উত্পত্তি। অনেকে বলে থাকেন, সম্রাট জুলিয়াস সিজার এভাবে জন্মেছিলেন। রোমান রাজ্যে কোনো গর্ভবতী মারা গেলে তার পেট কেটে মৃত বাচ্চা বের করা হতো। প্রায় ৪০০ বছর আগে সর্বপ্রথম জীবিত একজন মায়ের শরীরে ধরনের অপারেশন করা হয়।

অনলাইনে মেডিসিন অর্ডার করতে ভিজিট করুন দেশের সর্ব বৃহৎ অনলাইন মেডিসিন মার্কেট---

https://medilink.com.bd/

 

বাংলাদেশে সিজারিয়ান:

২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে আমাদের দেশে সিজারিয়ান অপারেশনের হার প্রায় ২৩ শতাংশ এবং এখন ২০১৭ সালে হয়ত ৩০ শতাংশের কাছাকাছি৷ এর বিশাল অংশ জুড়ে আছে শহরের সিজারিয়ান সেকশন৷ শহরের অনেক ক্লিনিক বা হাসপাতালে দেখা যায়, ডেলিভারির প্রায় ৮০ শতাংশই হয় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে।

তবে ডক্টররা বলেন অন্য কথা। তাঁদের মতে, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর যে হার, সেই হারের সাথে এবং ডেমোগ্রাফিক হিসেবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সিজারিয়ান অপারেশনের হার থাকা জরুরি।

যে কোনো একজন সাধারন মানুষের মনে একটি প্রশ্ন জাগে, সেটি হলো- এই পদ্ধতিতে ডেলিভারি কতটা যৌক্তিক? আপনার বাচ্চাকে পৃথিবীর মুখ আপনি দেখাতে পারেন তিনটি উপায়ে, যেমন, নর্মাল ডেলিভারি, অ্যাসিসটেড নর্মাল ডেলিভারি বা সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমে।

কখন সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন?

প্রকৃতির নিয়মের চেয়ে মানুষের তৈরি নিয়ম কখনোই ভালো হতে পারে না। তবে যখন নর্মাল ডেলিভারি সম্ভব নয় বা নর্মাল ডেলিভারি মা বা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশরের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে যে কারণগুলো উঠে আসে তার মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট চেষ্টার পরও যদি স্বাভাবিক প্রসব না হয়, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার শ্বাসকষ্ট বা ফেটাল ডিসট্রেস, বাচ্চার ওজন এবং মায়ের নর্মাল ডেলিভারি পথের অসামঞ্জস্যতা, গর্ভফুল জরায়ুর মুখকে ঢেকে রাখা, মায়ের খিচুনি ইত্যাদি।

পূর্বে বা তার বেশি সিজারিয়ান অপারেশনের ইতিহাস, জরায়ুর বড় কোনো টিউমার, মায়ের হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে যদি নর্মাল ডেলিভারি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রেও সিজারিয়ান করাতে হয়।

সিজারিয়ান অপারেশনের প্রস্তুতি:

আপনার সিজারিয়ান অপারেশন লাগবে কিনা তার অনেকটা ধারণা গর্ভাবস্থায় চেক আপের মাধ্যমে বোঝা যায়। এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস বি বা প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা ইত্যাদি করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় অপারেশনের কারণ অনুযায়ী রক্ত জোগার রাখতে হতে পারে৷ স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উচিত প্রসূতিকে মানসিক শক্তি যোগান দেওয়া। প্রসূতিকেও সাহস রাখতে হবে৷ চিকিত্সকের উপরে বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে হবে৷ প্রয়োজনীয় টাকা হাতে রাখুন এবং রক্তের জন্য ডোনারকে বলে রাখুন। কিভাবে হাসপাতালে যাবেন সেজন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ তাছাড়া কোন হাসপাতাল থেকে সেবা নিবেন তা আগে থেকে জেনে রাখাও জরুরি।

অপারেশনের সময় প্রসূতির ভয়ের কিছু নেই৷ তাঁর কোমরের নিচের অংশ অবশ করে সাধারণত এই অপারেশন করা হবে। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারকে জানাতে হবে। সাধারণত অপারেশনে ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগে। অপারেশনের টেবিলেই আমরা বাচ্চাকে মায়ের বুকের শালদুধ দেবার এবং মায়ের কাছাকাছি বাচ্চাকে রাখার চেষ্টা করি। অপারেশনের পরেও মায়ের যত্ন অত্যন্ত জরুরি। ব্যান্ডেজ খুলে দেবার পরে মাকে গোসল করতে হবে।

সিজারিয়ানের পরে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ:

তিন মাস পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করা যাবে। দেড় মাস পর থেকে অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শুরু করা যাবে। - বছর পরে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যাঁরা বাচ্চাকে বুকের দুধ দিচ্ছেন, তাঁদের খাবারে বাড়তি আমিষ, আয়রণ এবং ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হবে। তিন মাস পর থেকে ব্যায়াম শুরু করা যাবে।

তবে সিজারিয়ান অপারেশনের বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য শুধুমাত্র প্রসূতিবিদদের দায়ী করলে চলবে না। চলমান পুরো ব্যবস্থা কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত সামগ্রিকভাবে কাজ করতে হবে।

করণীয়:

. সঠিক নির্দেশনা বুঝে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

. গর্ভাবস্থায় চেকআপের হার বাড়াতে হবে।

. মিডওয়াইফ এবং স্পিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্ট বাড়াতে হবে।

. গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাউনসেলিং করে নর্মাল ডেলিভারির জন্য বোঝাতে হবে।

. ডেলিভারি কোন উপায়ে হবে সে সিদ্ধান্ত যেন ধাত্রীবিদ নিজে নেন। ক্লিনিক মালিক বা অদক্ষ কারো সিদ্ধান্তে যেন অপারেশন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

. একটি রোগীকে কখন, কোথায় রেফার করতে হবে সেটির সঠিক নির্দেশিকা থাকতে হবে।

শেষকথা:

সকল প্রসুতিবিদের প্রথম পছন্দ নর্মাল ডেলিভারি। সিজারিয়ান ডেলিভারি একটি বিকল্প পদ্ধতি যা আধুনিক এবং নিরাপদ। এই পদ্ধতিতে ডেলিভারির মাধ্যমে অনেক মা শিশুর জীবন রক্ষা হয়েছে। একজন দক্ষ প্রসুতিবিদের হাতে এই অপারেশন কখনোই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তাই আপনি সচেতন হোন এবং সচেতন করুন আপনার চারপাশকে। একটি নিরাপদ পদ্ধতিতে দক্ষ প্রসুতিবিদের হাতে যেন একজন মায়ের সুস্থ বাচ্চা ডেলিভারি হয় আমরা সেই আশা করি। জয় হোক মাতৃত্বের।