Facebook
Twitter
LinkedIn
Instagram
Tumblr

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, সম্ভাব্য জটিলতা ও প্রতিকার

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, সম্ভাব্য জটিলতা ও প্রতিকার


গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময়ে ডায়াবেটিস শুরু হলে বা প্রথমবারের মত ধরা পড়লে তাকে গর্ভকালীন বা Gestational ডায়াবেটিস বলে। এটি দুই ধরণের হতে পারে: প্রথমত: পূর্ব হতেই ডায়াবেটিস থাকা ( Pre-existing gestational diabetes) দ্বিতীয়ত: গর্ভজনিত ডায়াবেটিস (Gestational overt Diabetes) যে কোনো মানুষ যে কোনো বয়সে যে কোনো সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়:

. যাদের বংশে রক্ত সম্পর্কের নিকট আত্মীয় কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

. যাদের শারীরিক ওজন অনেক বেশি।

. যারা ব্যায়াম বা কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রম করেন না।

. যারা বহুদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করেন।

. যাদের নিম্নে উল্লেখিত কোনো ঘটনার history আছে: . কেজি বা তার বেশি ওজনের সন্তান। . জন্মগত ত্রুটিযুক্ত সন্তান। . পুনঃ পুনঃ গর্ভপাত হয়।

. গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু যার কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

অনলাইনে মেডিসিন অর্ডার করতে ভিজিট করুন দেশের সর্ব বৃহৎ অনলাইন মেডিসিন মার্কেট---

https://medilink.com.bd/

 

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয় (screening):

গর্ভের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো বয়সের মায়েরই ডায়াবেটিস হওয়া সম্ভব। তাই লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই screening পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস screening এর জন্য উপযুক্ত সময়: . ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায় থেকেই। . ঝুঁকিমুক্ত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ অর্থাৎ ছয় থেকে সাত মাস।

মায়ের সম্ভাব্য জটিলতা:

. জরায়ুতে অতিরিক্ত পানির উপস্থিতি বা পলিহাইড্র্যামনিওস (Polyhydramnios)

. উচ্চ রক্তচাপ।

. খিঁচুনি।

. গর্ভপাত।

. গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু।

সন্তানের সম্ভাব্য জটিলতা:

. সন্তানের গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia)

. অতিরিক্ত ওজনের শিশু বা ম্যাক্রোসোমিয়া(Macrosomia)

. কম ওজনের শিশু বা Intrauterine Growth Retardation (IUGR)

. জন্ডিস।

. রক্তের ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম হ্রাস পাওয়া (Hypocalcemia and Hypomagnesemia)

. শ্বাসকষ্ট (Respiratory Distress Syndrome)

. জন্মগত ত্রুটি (Congenital Anomaly) ইত্যাদি।

জটিলতা প্রতিরোধের উপায়সমূহ:

একজন অন্তঃসত্ত্বা মা তাঁর সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থায় সর্বমোট ১০ থেকে ১১ কেজি ওজন স্বাভাবিকভাবে gain করবেন। এজন্য তাঁকে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম শর্করা, ৭৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩০ শতাংশ চর্বি জাতীয় খাদ্যগ্রহণ করতে হবে।মায়ের সুষম পুষ্টি ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দিনের সম্পূর্ণ খাদ্যকে মোট ছয়ভাগে ভাগ করে গ্রহণ করতে হবে।

ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে-

প্রথমত: নিয়মিত, সঠিক সময়ে, পরিমাণ মতো সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত: চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধু অর্থাৎ সরল শর্করা (simple carbohydrate) জাতীয় সকল খাদ্য পুরোপুরিভাবে বাদ দিতে হবে।

তৃতীয়ত: নিয়মিত ব্যায়াম বা দৈহিক পরিশ্রম করতে হবে।

চতুর্থত: রক্তের শর্করা পরিমাপক যন্ত্র দ্বারা (গ্লুকোমিটার) নিজের রক্তের শর্করা পরিমাপ করা শিখে নিতে হবে।

পঞ্চমত: শারীরিক যে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যে সব খাবার খাওয়া নিষেধ:

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সহজ শর্করা (simple carbohydrates) উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া নিষেধ। যেমন-

. চিনি দ্বারা তৈরি শরবত খাবার।

. কেক, পেস্ট্রি, জ্যাম, মিষ্টি বিস্কিট।

. গুড়, গুড়ের মোয়া, গুড়ের পায়েস।

. কোমল পানীয়, জুস।

. গ্লুকোজ, গ্লুকোজের শরবত।

. মধু।

. খেজুর, তাল বা আখের রস।

. মিছরি।

বিশেষ সতর্কতা:

পরিবারের অন্য কোনো সদস্য যিনি কাছে থাকবেন, তাকেও গ্লুকোমিটার দ্বারা রক্তের শর্করা পরিমাপ করা শিখে নিতে হবে এবং বাসায় গ্লুকোজ রাখতে হবে। যেন ইনসুলিন দেওয়ার পর বা অন্য কোনো ভাবে রক্তের শর্করা কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) হলে জীবন বাঁচাতে রোগীকে গ্লুকোজ খাওয়াতে পারেন। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণসমূহের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ, মাথা ঘোরানো, মাথা ব্যথা অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও হতে পারে।