অটিজম: ভিন্ন প্রেক্ষিতে জীবন

অটিজম কোন সাধারণ রোগ নয়। এটি শিশুদের একটি মনোবিকাশগত জটিলতা যার ফলে সাধারণত ৩টি সমস্যা দেখা দেয়-
১. মৌখিক কিংবা অন্য কোনো প্রকার যোগাযোগ সমস্যা।
২. সামাজিক বিকাশগত সমস্যা।
৩. খুব সীমাবদ্ধ ও গণ্ডিবদ্ধ জীবন-যাপন ও চিন্তা-ভাবনা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ।
এছাড়া অতি চাঞ্চল্য (hyperactivity), জেদী ও আক্রমণাত্মক আচরণ (Aggressiveness), অহেতুক ভয়ভীতি, খিচুনী ইত্যাদিও থাকতে পারে।
অনলাইনে মেডিসিন অর্ডার করতে ভিজিট করুন দেশের সর্ব বৃহৎ অনলাইন মেডিসিন মার্কেট---
অটিজমের প্রকোপ
বিশ্ব স্বাস্থ্য ও কমিউনিকবল ডিডিজ কন্ট্রোলের বরাত দিয়ে আমেরিকায় কর্মরত শিশু মনোবিজ্ঞানী ড: এম হক জানান, বিশ্বে ১ শতাংশ অটিজমে আক্রান্ত শিশু। প্রতি ৬৮ জন শিশুর ১ জন অটিজমে আক্রান্ত।
ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে অটিজম হবার সম্ভাবনা মেয়ে শিশুদের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশী। দেশের সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্যমতে, দেশে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশের মোট প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশকে অটিজমের শিকার বলে ধরে নেওয়া হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণ জরিপ অনুযায়ী (২০১৮) দেশে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪২ হাজার ৪৫০। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর হার ৩ শতাংশ আর ঢাকার বাইরে দশমিক ৭ শতাংশ। বর্তমানে তা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
অটিজম কেন হয়?
অটিজমের কারণ সম্পর্কে এখনও কোন নির্দিষ্ট বিষয় চিহ্নিত করা যায়নি। মস্তিস্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ (সেরোটোনিন), মস্তিস্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগতির অস্বাভাবিকতা, এমন কি বিভিন্ন টিকা প্রয়োগ থেকে এই রোগ হতে পারে বলা হলেও নির্দিষ্ট করে কিছু এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
বাবা-মায়ের বয়স অবশ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভকালীন ভাইরাল (জিকা, রুবেলা ইত্যাদি) ইনফেকশন,
গর্ভকালীন জটিলতা এবং
বায়ু দূষণকারী উপাদানসমূহ স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
বিভিন্ন জীনের কারণে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হতে পারে।
আবার কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে জেনেটিক ডিজঅর্ডার যেমন- রেট সিন্ড্রোম বা ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোমের সাথে এই রোগটি হতে পারে
কিছু জীন মস্তিষ্কের কোষসমূহের পরিবহন ব্যবস্থায় বাধা প্রদান করে এবং রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।
জেনেটিক বা জীনগত সমস্যা বংশগতও হতে পারে আবার নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই এই রোগটি হতে পারে।
ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধকের দেয়া বা না দেয়ার সাথে অটিজমের কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
অটিজম কথা বলে কান পেতে রই
নিচের লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবশ্যই শিশুকে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
৬ মাসে যদি না হাসে।
১২ মাসে আধো আধো বোল না থাকলে বা কোন কিছু নির্দিষ্ট করে দেখাতে না পারলে।
১৬ মাসে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে না পারলে।
যে কোন কারণে কথা না বললে বা বন্ধ হয়ে গেলে। সাধারণত শিশুর বয়স ১৮ মাস থেকে ৩ বছর এর মধ্যে এই রোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১। এদের ভাষার বিকাশ হতে বিলম্ব হয়। স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না (স্বল্প কথা জানে, ইশারায় কথা বলতে পছন্দ করে,অযথা গুনগুন করে)
২। এরা সমবয়সী কিংবা অন্যান্যদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। ৩। এরা নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না এবং আপন মনে থাকতে পছন্দ করে।
৪। এরা অন্যদের চোখের দিকে তাকায় না। অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না।
৫। একই কথা পুনরাবৃত্তি করে এবং একই কাজ বার বার করতে পছন্দ করে। দৈনিক কাজের রুটিন বদল হলে খুবই উত্তেজিত হয়।
৬। এদের কাজকর্ম এবং সক্রিয়তা সীমিত ও গণ্ডিবদ্ধ। পরিবেশ এবং আশেপাশের কোন পরিবর্তন খুব অপছন্দ করে।
৭। এরা কখনো অতি সক্রিয় আবার কখনো খুব কম সক্রিয় হয়। অতিসক্রিয়তা থেকে কখনো খিচুনী হতে পারে।
৮। সাধারণত খেলনা দিয়ে কোন গঠনমূলক খেলা বা কল্পনাপ্রসূত খেলা খেলতে পারে না অথবা কোন বিশেষ খেলনার প্রতি অত্যধিক মোহ দেখা যায় এবং সেটি সব সময় সাথে রাখে।
৯। কখনো মনে হতে পারে যে এরা কানে শুনতে পায় না। এরা মাকে বা অন্য কোন প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে না এবং তাদের কেউ ধরলেও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না অথবা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
১০। কোন বিশেষ সংবেদন-এর প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করে যেমন আলোতে চোখ বন্ধ করা, শব্দ শুনলে কানে হাত দেয়া, দুর্গন্ধে কোন প্রতিক্রিয়া না করা, স্বাদ ও স্পর্শে তেমন কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ না করা
১১। জড় বস্তুকে মানুষের মত মনে করে, জিনিস পত্র চাটতে ভালোবাসে।
অটিজম শনাক্তকরণের জন্য কোথায় যাবেন?
এই সেবা দিয়ে আসছে হাতে গোনা কয়েকটি সেন্টার যেমন-
বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বহিঃবিভাগ
সেন্টার ফর নিউরোডেভালাপমেন্ট ও অটিজম ইন চিলড্রেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
শিশু বিকাশ কেন্দ্র, বিভিন্ন্ সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অটিজম সনাক্তকরণে যথাযথ ব্যবস্থা আছে।
এছাড়াও সি আর পি (মিরপুর, ঢাকা) ও সি আর পি (সাভার, ঢাকা)-তে এই কাযক্রম চালু আছে।
অটিজমের কোন চিকিৎসা আছে কি?
এখন পর্যন্ত অটিজমের কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে নিজেদের সম্পূর্ণ অসহায় মনে করাও সঠিক নয়। বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পিতা-মাতা ও আপনজনদের শ্রম ও যত্ন এবং এই রোগের সাথে সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহায়ক দলের একত্রে কার্যক্রমে শিশুর বিকাশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হলেও একটি শিশুকে স্বাধীন জীবন-যাপন করার মত পর্যায় আনা সম্ভব হয় (প্রায় ৮০ ভাগ স্বাভাবিক)।
- এপ্লায়েড বিহেভিয়র এনালিসিস বা একজনের তত্ত্বাবধানে একজন অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে স্বাভাবিক ব্যবহার শেখানো হয়।
- কিছু ঔষধপত্র প্রয়োগ যা তার অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা দূরীকরণে সহায়তা করে।
- ধারনা করা হয় গ্লুটেইন মুক্ত খাবার অটিজমের শিশুকে ভাল রাখে।
- Omega-3, Omega-6, Vit-B-6, Vit-B-12 ও Vit-D সাপ্লিমেন্ট ভালো কাজ দিতে পারে।
- অটিজমের চিকিৎসা বহুমাত্রিক অভিগমন। সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। যেমন- <