Facebook
Twitter
LinkedIn
Instagram
Tumblr

অটিজম আক্রান্ত শিশুর আচরণ ও চিকিৎসা

অটিজম আক্রান্ত শিশুর আচরণ ও চিকিৎসা

অটিজম আক্রান্ত শিশুর আচরণ ও চিকিৎসা

অটিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের বা স্নায়ুবিদজনীত সমস্যা। এটিকে শিশুদের নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজওর্ডার বলে। শিশুদের অটিজমের লক্ষণগুলো এক থেকে তিন বছরের মধ্যে বুঝা যায়। অভিভাবকরা তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত রোগটির প্রকৃত কোনো কারণ বের করতে পারেননি। তবে অটিজম জীনগত এবং পরিবেশগত কিছু কারণে হয় বলে তারা মনে করছেন। 

অনলাইনে মেডিসিন অর্ডার করতে ভিজিট করুন দেশের সর্ব বৃহৎ অনলাইন মেডিসিন মার্কেট ????????

https://medilink.com.bd/

 

অটিজম

অটিজম শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশজনীত সমস্যা। দেশে অনেক ধরনের নিউরো ডিজঅর্ডার সমস্যা রয়েছে। কিন্তু অন্যগুলোর সাথে অটিজমের একটি মৌলিক তফাৎ রয়েছে। জন্মের পর একটি শিশুর মুখমণ্ডলে যদি আকার আকৃতিতে বিকৃতি থাকে, শিশুটি যদি অনেক বেশি নরম হয়ে থাকে তখন এ ধরনের শিশুকে বলা হয় ডাউন সিনড্রোম (শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে) রোগী। কিন্তু অটিজম এমন একটি রোগ, জন্মের পর প্রথম এক বছর পর্যন্ত শিশুটি ভালোই থাকে। এ সময় কিছুই বুঝা যায় না। 

এক বছরের একটি শিশু একটু একটু কথা বলে, দাঁড়ায় ও হাঁটে। ওই বয়সে কিছু বুদ্ধিও থাকে। এক বছর পর্যন্ত শিশুটি ভালোই থাকে কিন্তু দেড় বছর বয়সে গিয়ে শিশুটি আগের মতো হাঁট-চলা ঠিকই করে তবে আগে যে কথাবার্তাগুলো বলছে সেগুলো এখন হারিয়ে গেলো। অর্থাৎ শিশুটির কথাবার্তা কমে গেছে পাশাপাশি যে কথাবার্তা এখন বলছে সেগুলো অপ্রয়োজনী কথা। প্রয়োজনীয় যে কথা বার্তা দরকার সে কথাগুলো আর বলছে না। আচার-আচারণে সমস্যা শুরু হয়। তিন বছর বয়সে অটিস্টিক শিশুর সমস্ত আচার আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়। এক বছর বয়সে যে শিশুটি ভালো ছিলো, দেড় বছর বয়সে সেই শিশুটির মধ্যে কি এমন হলো? যেটার কারণে শিশুটির মধ্যে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আসলো। সে কারণে বলা হয়, অটিজম একটি নিউরো ডিজঅর্ডার ডেভেলপমেন্ট (স্নায়ুর বিকাশজনীত সমস্যা)। স্নায়ুজনিত যত সমস্যা আছে তার মধ্যে এটি একটি বিশেষ সমস্যা। এ ধরনের শিশুকে সাধারণত বিশেষ শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। 

উপসর্গ

* অটিজম আক্রান্ত শিশু সাধারণ শিশুর সাথে সামাজিক যোগাযোগ  রক্ষা করতে পারে না।

* কারো সঙ্গে মিশতে পারে না।

* ভাষার মাধ্যমে এবং ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকে না।

* পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে।

* একই কাজ বারবার করে, একই খেলা বারবার খেলতে পছন্দ করে। 

* একই কথা বারবার বলতে পছন্দ করে। 

* সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা-বার্তা বলতে পারে না। 

এ ছাড়া আরো কিছু দেখা উপসর্গ দেখে বুঝা যায়। যেমন-

* চোখে চোখ রেখে কথা না বলা।

*ডাক দিলে সাড়া দেয় কম। 

*কিছু বাচন ভঙ্গি, হাতের নাড়াচাড়া এবং একটি নতুন জায়াগা গেলে ঐ পরিস্থিতিতে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। 

কারণ

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রকৃত কোনো কারণ বের করতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা এতটুকু পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, অটিজম একটি জীনগত সমস্যা ও পরিবেশগত সমস্যা। জীনগত সমস্যার মধ্যে রয়েছে ডাউন সিনড্রোম। এ ছাড়াও রয়েছে ফ্র্যাজাইল এক্স সিনড্রোম। এই সিনড্রোম গুলোর সাথে অটিজম রোগটি বেশি আসে। যেহেতু এ রোগগুলো জেনেটিক তাই এগুলোর সাথে অটিজম বেশি আসে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো শিশু জন্মের পর অনেক ছোট আকারের হলেও পরবর্তীতে অটিজম আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া আরো যেসব কারণ রয়েছে-

*বাবার বয়স যদি চল্লিশের উপরে হয় এ ক্ষেত্রে অটিজমে শিশু জন্ম হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। 

*জন্মের সময় কোনো অসুবিধার কারণে যদি নিউরো কেমিকেল ট্রান্সমিটারের অসুবিধা থাকে তখনও শিশুর অটিজম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

*হরমোনজনিত অসুবিধার কারণে হতে পারে। 

*ওষুধের বাড়তি বা ঘাটতি অটিজমের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। 

*গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা করা।

গ্রাম ও শহরে বড় ধরনের পার্থক্য

অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে অটিজিম আক্রান্ত শিশুর হার অনেক বেশি। আমাদের দেশেও গ্রামের তুলনায় ঢাকা শহরে অটিজম আক্রান্ত শিশু অনেক বেশি। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরে প্রকাশিত এক বুলেটিনে দেখা গেছে, ঢাকা শহরে শতকরা তিনজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত। অন্যদিকে গ্রাম-গঞ্জে ৭০০ জন শিশুর মধ্যে মাত্র একজন অটিজম আক্রান্ত। পরবর্তীতে দেশব্যাপী আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজমের সংখ্যা ঢাকা শহরে বেশি। উচ্চবিত্ত পরিবার ও ছোট একক পরিবারে মধ্যে বেশি। বাহিরের দেশের গবেষণাগুলোতেও দেখা যায় যে, অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে অটিজম আক্রান্তের হার বেশি। 

অটিজম কোন বংশগত রোগ নয় বা বাবা মায়ের অভিশাপের ফল নয়। চিকিৎসকরা মনে করেন, এটি বাবা মায়ের কোনো দোষের কারণে হয় না। এটির জন্য বাবা-মা কেউ দায়ি নয়। তবে কিছু কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, বাবা-মায়ের বয়সের সাথে অটিজম শিশু জন্মের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বাবার বয়সের সাথে বিষয়টির বেশি সম্পর্ক রয়েছে। বাবার বয়সের সাথে, শিশুর জন্মের সময় ছোট আকারের সাথেও কিছু সম্পর্ক রয়েছে। এ রোগটি মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বেশি। ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে এর অনুপাত হলো ৪: ১। অর্থাৎ চারজন ছেলের বিপরীতে একজন মেয়ে অটিজমে আক্রান্ত। 

নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব

প্রথম তিন বছরে শিশুর বিকাশ হয় অনেকাংশ। মানুষের মস্তিষ্কে অনেকগুলো নিউরোন সেল থাকে। জন্মের আগেই মস্তিষ্কে যে সেল থাকে সেটা নিয়েই মানুষকে চলতে হয়। জন্মের পর মস্তিষ্কে সেল সংখ্যা আর বাড়ে না। একটি নিউরোন আরকটি নিউরোনের সাথে যে সংযোগ করে, সেই সংযোগস্থলকে বলে সিনাপ্স। জন্মের সময় পঞ্চাশ ট্রিলিয়ন সিনাপ্স থাকে। পরবর্তীতে তিন বছরে এটি এক হাজার ট্রিলিয়ন হয়ে যায়। এ তিন বছরের মধ্যে শিশুর বিকাশ যত বাড়তে থাকে মস্তিষ্কে সিনাপ্সের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এ তিন বছরের মধ্যে যদি রোগটি নির্ণয় করা যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা করানো গেলে রোগের মাত্রা কমিয়ে ফেলা যায়। যদি ব্রেনের বিকাশ সম্পূর্ণ হয়ে যায় (পাঁচ বছর পরে) তাহলে অনেক কিছু আর ফিরিয়ে আনা যায় না। 

অটিজম চিকিৎসার অগ্রগতি

দেশ অটিজম চিকিৎসায় অনেকদূর এগিয়েছে। সহজে রোগ নির্ণয়  এবং ব্যবস্থাপনায়  অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ ক্ষেত্রে সায়মা ওয়াজেদের অবদান রয়েছে। এ রোগের চিকিৎসার জন্য অনেক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে। যেমন: বিএসএমএমইউ-এর ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা)। একইভাবে ১৫ টি মেডিকেল কলেজে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া সমস্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমিপ্লেক্সের পাশে অটিজম কর্নার নামে একটি কর্নার রয়েছে। এ ইনস্টিটিউটগুলোর প্রথম কাজ হলো রোগ নির্ণয় করা এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া। 

করণীয়

নির্দিষ্ট বয়সে শিশুর নির্দিষ্ট বিকাশ হচ্ছে কিনা, বিষয়টি গুরুত্বসহ খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন: এক বছরের একটি শিশু এতটুকু কথা বলার কথা, দুই বছরের শিশু এতটুকু কথা বলার কথা। অর্থাৎ ধাপে ধাপে শিশুর যে বিকাশটা হওয়ার কথা সেই বিকাশটা হচ্ছে কিনা; এজন্য শিশু বিশেষজ্ঞ বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অটিস্টিক শিশুদের লাল পতাকা দ্বারা চিহিৃত করে। একটি শিশু দেড় মাস বয়সে প্রথম মায়ের দিকে তাকিয়ে বড় করে হাসি দেয় কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেও যদি কোনো শিশু তার মায়ের দিকে তাকিয়ে না হাসে, তাহলে এসব শিশুকে একটি লাল পতাকা দিয়ে চিহিৃত করা হয়। ছয় মাস বয়সে একটি শিশু বাবলিং (বাববাব্বা) সাউন্ড করে। এক বছরের মধ্যে যদি শিশুর কোনো বাবলিং সাউন্ড না আসে এবং শিশুটি যদি তার প্রয়োজন আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ না করে তাহলে এটিকেও লাল পতাকা দ্বারা চিহিৃত করা হয়। এ ছাড়ও এক বছরের শিশু একটু একটু কথা বলে। যেমন: বাবা, দাদা ও মামা। কিন্তু দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে যদি একটি শিশু এ শব্দগুলো না বলতে পারে এবং দুই বছরের একটি শিশু যদি দুই শব্দকে একসাথে বলতে না পারলে লাল পতাকা চিহিৃত হবে। এ সময় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

চিকিৎসা 

এ রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়। কারণ, এটি জেনেটি। আবার অন্যদিকে রোগীর তুলনায় চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল। প্রথমে রোগটি নির্ণয় করতে হবে। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে কিছু হাইপার অ্যাক্টিভিটি (অতিরিক্ত চঞ্চলতা) থাকে। খাওয়ার অসুবিধা থাকে। হজমের অসুবিধে থাকে, খিঁচুনি থাকে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক যথেষ্ট কিন্তু এ রোগগুলোর কিছু ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য একজন সাইকোলজিস্টের প্রয়োজন হয়, একজন স্পিচ থেরাপিস্টের প্রয়োজন হয়। এ শিশুদের শিক্ষার জন্য এবং ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের একটি বিশেষ স্কুলের প্রয়োজন হয়। দেশে অটিজম আক্রান্তের তুলনায় স্কুলের পরিমাণ অনেক কম। তবে সরকারের সুনজর থাকায় এ সংক্রান্ত কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানও। যারা কাজ করছে এ সমস্ত শিশুদের নিয়ে। অটিজম শিশুদের জন্য যে চিকিৎসা প্রয়োজন তা হলো-ব্যবহারিক চিকিৎসা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ স্কুল সেবার। এজন্য দেশে আরো অনেক বেশি বিশেষ স্কুল দরকার।